অথচ ভুয়া একাডেমির খপ্পরে শেষ হতে পারত হৃদয়ের স্বপ্ন
বুকভরা আত্মবিশ্বাস, দুই চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বগুড়া থেকে ঢাকায় এসেছিলেন তৌহিদ হৃদয়। উদ্দেশ্য পাড়ার বড় ভাই মুশফিকুর রহিমের মতো বড় মাপের ক্রিকেটার হবেন। স্বপ্নের শুরুটা মুশফিকের একটি স্টাম্প দেখে, ‘আমি অনেক ছোট ছিলাম। ২০০৭ সালের একটা কাহিনী। মুশফিক ভাই বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জিতে একটা স্টাম্প পেয়েছিলেন। তখন আমি অনেক ছোট, একদিন স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম। একটা প্রোগ্রামে মুশফিক ভাইয়ের কাছে যখন স্টাম্প দেখেছিলাম তখন থেকেই অনেক অনুপ্রাণিত হই। ওখান থেকেই ইচ্ছে ছিল যদি আমি একদিন খেলতে পারি জাতীয় দলে।’
ষোলো বছর পর হৃদয়ের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। শনিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে পথচলা শুরু হৃদয়ের। যাকে দেখে বড় হয়েছে, যার অনুপ্রেরণায় বেছে নিয়েছেন ক্রিকেটের কঠিন পথ তার হাত থেকেই শনিবার পেয়েছেন দেশের ১৪০তম ওয়ানডে ক্যাপ। শুধু তাই নয়, একই ২২ গজ রাঙিয়েছেন দুজন (৪৯ বলে ৮০ রান)। সঙ্গে আফসোসে পুড়েছেন দুজনই।
মুশফিক ৪৪ রানে আউট হওয়ার এক বল পরই হৃদয় ৯২ রানে থেমে যান। অথচ পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ওই পজিশনে অভিষেকে সেঞ্চুরি হাঁকানোর বিশ্ব রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছিল তাকে। হৃদয় পারেননি সেঞ্চুরিতে অভিষেক রাঙাতে। তবে যা হয়েছে তাতে গর্ব খুঁজে নিচ্ছেন, ‘আমি শুরুতে আউট হতে পারতাম। যেটা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। শুকরিয়া। এটা হয়ত রিজিকে ছিল। ভবিষ্যতে হবে ইনশাআল্লাহ।’
কিন্তু বগুড়া থেকে জাতীয় দলের আসা পর্যন্ত যে কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছেন হৃদয় তা থমকে যেতে পারত শুরুতেই। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে পা বাড়িয়ে প্রতারণার শিকার হন। মায়ের জমানো টাকা দিয়ে রাজধানীর বনশ্রীতে এক ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন পরই উধাও সেই একাডেমি। ভাঙে হৃদয়ের হৃদয়!
পুচকে ফিরে যান বগুড়ায়। ২০১২ সালের সেই ঘটনায় ওলটপালট হয়ে যেতে পারতো হৃদয়ের স্বপ্ন। তবে তেমনটা হয়নি। বিধাতা যার নামের পাশে ক্রিকেটার শব্দটি যুক্ত করে দিয়েছেন তার তো ক্রিকেটার হতেই হবে। বছর চারেক পর খালেদ মাহমুদ সুজনের তত্ত্বাবধানে রাজশাহীর বাংলা ট্র্যাক একাডেমিতে পুনরায় পথচলা শুরু হৃদয়ের।
ব্যাস সেখানেই বাজিমাত। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বহু ক্রিকেটারের গুরু খালেদ সুজনের হাত ধরে বড় মঞ্চে পথচলা শুরু করেন। প্রথমে যুক্ত হন বয়সভিত্তিক দলে। পরবর্তীতে ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত হয়ে পড়েন ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপ জেতা এ ক্রিকেটার কঠিন সময় পেরিয়ে বড় মঞ্চ আলোকিত করায় যারপরনাই খুশি।
‘যখন একাডেমিতে গিয়েছিলাম, অনেক কিছু আসলে ক্ষতি করেই গিয়েছিলাম। তারপর একটা সময় ক্রিকেট খেলার কোনও ইচ্ছে ছিল না। পরিবার থেকে ওভাবে কোন সাপোর্ট ছিল না। বাবার সাপোর্ট ছিল না। যদিও বাবা খেলা বুঝে না। আমি যখন জেদ ধরতাম মায়ের সঙ্গে, যতটুকু পেরেছে আর কী চেষ্টা করেছে। সেসময় সুজন স্যার... আসলে সেই ছোট বেলাতেই,যখন আমি অনূর্ধ্ব-১৬ খেলি, সুজন স্যার ওখান থেকে নিয়ে এসেছে এবং উনি আসলে সুযোগ করে দিয়েছে। ওখান থেকে ফাস্ট ডিভিশন খেলে আস্তে আস্তে ওখান থেকেই উঠে আসা।’
শেষ কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় ছিলেন এ ক্রিকেটার। এইচপি দল, বাংলা টাইগার্স ও ‘এ’ দল পেরিয়ে জাতীয় দলের সেরা একাদশে এ ক্রিকেটার। লম্বা সফরে একাধিক স্থানীয় কোচদের নিয়ে কাজ করেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুল করলেন না, ‘অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছি। এইচপিতে ছিলাম,ঘরোয়াতে খেলেছি। সুজন স্যারের সঙ্গে কথা হতো। সোহেল স্যারের সঙ্গে সবসময় কথা হয়েছে। এহসান স্যারও ছিল।’
No comments